বড় কোনো চমক না ঘটলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র মেয়র সাঈদ খোকন ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী হওয়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় দলটি। তবে আজ সন্ধ্যায় বসতে যাওয়া দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচনী বোর্ডের বৈঠকে নির্ধারণ হবে খোকন-তাপসের ভাগ্যলিখন।
দলের নেতারা বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ছাড়া তেমন বড় কোনো নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাননি। তাই তার মনোনয়ন একরকম চূড়ান্তই বলা যায়।
আর দক্ষিণে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ছাড়াও প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখিয়েছেন শেখ পরিবারের সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু ও সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম নির্বাচনে আগ্রহী। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নের লড়াই হবে খোকন ও তাপসের মধ্যে। শেষ হাসি কে হাসবেন সেটা নির্ধারণ হবে আজকের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত তাদের মনোনয়ন দিব না। বিতর্কের ঊর্ধ্বে যারা, যাদের অপকর্মের রেকর্ড নেই- এ ধরনের প্রার্থীদের আমরা চুজ করব।’
কাদের বলেন, ‘আগামীকাল (আজ শনিবার) সন্ধ্যা ছয়টায় গণভবনে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বোর্ড বসবে। আমাদের নেত্রীরও মাইন্ড সেট ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলামকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় দফায়ও মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের নেতারা। বিশেষ ওই বিবেচনাটি হলো তিনি চলতি বছর উপনির্বাচনের বিজয়ী হয়েছেন। নিজের দক্ষতা প্রমাণে তিনি তেমন সময় পাননি। তাই কর্মদক্ষতা প্রমাণে তাকে আরও সময় দিতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাছাড়া ঢাকা উত্তরে বসবাস করা বেশির ভাগ মানুষ ‘উচ্চবিত্ত’ হওয়ায় আতিকুলই সেখানে ভালো করতে পারবেন বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।
সাঈদ খোকনের ব্যাপারে দলের নেতারা বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকবেলায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, যা মেয়রের ইমেজের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ে অনেকেই মেয়রের ব্যর্থতার কথা বলছেন। ডেঙ্গু নিয়ে নানান বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশজুড়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এরও আগে ঢাকার সড়কগুলোর পাশে ডাস্টবিন বসানোর প্রজেক্টেও ব্যর্থ হন তিনি; এ নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। তাকে মনোনয়ন দিলে এ বিষয়গুলো সামনে আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, ‘যদি মেয়রের দায়িত্বে অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হয় সে ক্ষেত্রে সাঈদ খোকন আবার প্রার্থী হবেন। প্রার্থিতা বহাল রাখার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন খোকন। দেখা যাক কী হয়।’
স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, ‘দক্ষিণে তো কিছু একটা রয়েছে। তাপস কি এমনি এমনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। নিশ্চয় কোনো সিগনাল পেয়েছে। আর সাঈদ খোকন যেহেতু বর্তমান মেয়র, তাই সে তো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দাবি করতেই পারে।‘
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। নিজের রাজনীতির কঠিন সময় পার করছেন জানিয়ে তিনি এ সময় কান্নাও করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
পরে ওই দিন রাতে সাঈদ খোকন দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। তাকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন নেত্রী। খোকন বলেন, ‘নেত্রীর সঙ্গে আমি দেখা করেছি। তিনি আমাকে নির্বাচনী প্রচার- প্রচারণা শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
তাপসের আগ্রহের কারণ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, গত তিন মেয়াদে ঢাকা-১০ আসনের জনগণের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন কাজে দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর করতে হয়। অধিকাংশ কাজ সিটি করপোরেশনের অধীনে চলে যায়। অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত সেবা জনগণকে দেয়া যায় না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দেশটাকে যেভাবে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই অনুযায়ী এ সংস্থাগুলো কাজ করতে পারছে না। সেই হতাশা থেকেই মেয়র পদে নির্বাচনের চিন্তা। আরেকটু বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি।’
বিশেষ করে সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগের কারণে নাগরিকদের দুর্ভোগ তাকে খুবই ব্যথিত করেছে উল্লেখ করে তাপস বলেন, ‘মানুষের এই দুর্ভোগ দেখে আমার মনে হয়েছে সিটি করপোরেশনে গিয়ে মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ রয়েছে বৃহৎ পরিসরে। এ ছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে পরিকল্পনা, সেটা বাস্তবায়ন করতে গেলে ঢাকা সিটিকে একটা উন্নত সিটি হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘আমরা যখনই কোনো নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করি সেখানে আমরা তিনটি বিষয় প্রধান্য দিয়ে থাকি। প্রথমত, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা; দ্বিতীয়ত প্রার্থীর জনপ্রিয়তা এবং সর্বশেষ যে দায়িত্ব তাকে দেয়া হবে সেই দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা।
ফারুক খান বলেন, ‘এ ছাড়া কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কি না আমরা সেগুলোও দেখব। তার ওপর ভিত্তি করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিব। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না।’
সবচেয়ে যোগ্য, গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ইমেজের ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসাবে তারা চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘আগ্রহী প্রার্থী হিসাবে যারা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে ভালো ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে আমরা বাছাই করব।’
প্রার্থী কারা
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে ২০ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে ফরম সংগ্রহ করেছেন ১২৩৪ জন।
ঢাকা উত্তরে মেঢর পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন, বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম, শহীদুল্লাহ ওসমানী, মেজর (অব.) ইয়াদ আলী ফকির, জামান ভূঁইয়া, কুতুবউদ্দিন নান্নু, ইদ্রিস আলী মোল্লা, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, জেরিন সুলতানা কান্তা, হেলেনা জাহাঙ্গীর, আদম তমিজি হক, খায়রুল মজিদ, রেহেনা ফরহাদ আইভি।
দক্ষিণে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া ৮ জন হলেন, বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, হাজি মোহাম্মদ সেলিম, নজিবুল্লাহ হিরু, নাজমুল হক, এমএ রশিদ, আশরাফ হোসেন সিদ্দিকী, হাজি আবুল হাসনাত।